সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী বাংলাদেশে প্রথমবারের মত মাল্টা ও কমলার গ্রীনিং (Citrus Greening) রোগসৃষ্টিকারী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রশিদুল ইসলাম-এর তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর গবেষক ও উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের এম এস ফেলো মোহাম্মদ মনিরুল হাসান টিপু যৌথভাবে ব্যাকটেরিয়াটি সনাক্ত করেছেন। মাল্টা ও কমলার গ্রীনিং একটি প্রাচীন রোগ বলে অভিহিত। Candidatus Liberibacter asiaticus নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনের ফলে মাল্টা ও কমলা গাছে এ রোগটি হয়। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়, ফলন কমে যায় এবং পর্যায়ক্রমে গাছ মারা যায়। চারাগাছ আক্রান্ত হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং গাছ অকালে মারা যায়। ধারনা করা হত এটি জিংক ও অন্যান্য পুষ্টির অভাবজনিত সমস্যা। ফলে পর্যাপ্ত সার ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করেও এ সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছিল না। এ ব্যাপারে বারি-র উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ‘সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প’-এর পরিচালক ড. মোঃ আজমতউল্লাহ বলেন যে তিনি প্রায় ২৫ বছর যাবৎ লেবুজাতীয় ফসল মাল্টা ও কমলার উপর গবেষণা করে আসছেন এবং ধারনা করেছিলেন এটি শুধুমাত্র পুষ্টির অভাবজনিত সমস্যা নয়, কোন জীবানুঘটিত কারন হতে পারে। তাই ব্যাকটেরিয়াটির সনাক্তকরণ লেবুজাতীয় ফসলের সুস্থ্য চারা উৎপাদন ও চাষের প্রসারে অন্যতম ভূমিকা রাখবে। সনাক্তকরণের ব্যাপারে গবেষকদল বলেন, ব্যাকটেরিয়াটি সনাক্তকরণ এতটা সহজ ছিলো না কারন ব্যাকটেরিয়াটি কৃত্রিমভাবে গবেষণাগারে চাষ (Culture) করা যায় না। ফলে তারা আধুনিক প্রযুক্তি (Molecular technique)-এর মাধ্যমে মাল্টা ও কমলার রোগাক্রান্ত পাতার মধ্যশিরা (Midrib) থেকে ব্যাকটেরিয়াটির ডিএনএ পৃথক করে পরীক্ষার (Polymerase Chain Reaction, Gel electroporesis) দ্বারা এর অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা জীবানুটির জীন সিকুয়েন্সিং করেন এবং অন্যান্য দেশে প্রাপ্ত গ্রীনিং-এর জীবানুর সাথে সাদৃশ্য পান।
সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ২৮০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে দেড় লক্ষ টনেরও অধিক লেবুজাতীয় ফসল উৎপাদিত হয়। সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে আরও ৮০০ হেক্টর জমিতে লেবুজাতীয় ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় যা বিদেশ থেকে মাল্টা ও কমলার আমদানী কমিয়ে দেশের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। গবেষকদলের এ সাফল্য প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এক অনন্য অবদান রাখবে। জানতে চাওয়া হলে গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. রশিদুল বলেন, গ্রীনিং-এর জীবানু, এর সংক্রামনের বাহক এবং এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন যা মাল্টা ও কমলার দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করবে এবং আমদানী নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনবে। গবেষণা সম্পর্কে মোহাম্মদ মনিরুল হাসান টিপু বলেন, তিনি লেবুজাতীয় ফসলের মলিকুলার পর্যায়ে গবেষণা করতে আগ্রহী এবং এ সাফল্য তাকে আরো উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে প্রেরণা যোগাবে।
-প্রেস বাংলাদেশ